খুলনায় গৃহবধূর ওপর নৃশংস নির্যাতন: গণধ-র্ষ-ণের আলামত মিলেছে
খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় এক গৃহবধূর ওপর সংঘটিত বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ৪২ বছর বয়সী এই নারীর শরীরে গণধ-র্ষ-ণের আলামত পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। গৃহবধূর স্পর্শকাতর অংশে কালসিটে দাগসহ একাধিক কামড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এমনকি তার মুখ এবং চোখ শক্তিশালী আঠা (গ্লু) দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি চিৎকার করতে বা কিছু দেখতে না পারেন। এ সময় হাত ও পা রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তাকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। দুর্বৃত্তরা গৃহবধূকে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, এত নৃশংস নির্যাতনের দৃশ্য তারা আগে কখনো দেখেননি।
প্রতিবেশীদের তৎপরতায় উদ্ধার
গত রোববার রাতে এই ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিবেশীরা ভুক্তভোগীর গোঙানির শব্দ শুনে এগিয়ে যান। পরে ঘরের ভেতর থেকে তাকে হাত-পা বাঁধা এবং মুখ-চোখ আঠা দিয়ে আটকানো অবস্থায় উদ্ধার করেন। এর পরের দিন সকালে অচেতন অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরলেও তিনি বাকরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। চোখের পানি দিয়ে তিনি তার মনের বেদনা প্রকাশ করছেন।
পরিবারের সদস্যদের দুঃসহ পরিস্থিতি
ভুক্তভোগীর স্বামী, যিনি পেশায় কাঁচামালের ব্যবসায়ী, ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না। তিনি জানান, প্রতি শনি ও বুধবার তিনি বাড়িতে থাকেন। ঘটনার দিন রাত ৪টার দিকে ফোন পেয়ে তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ৬টার দিকে বাড়িতে এসে দেখেন, স্বজনরা তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুমন রায় জানিয়েছেন, গৃহবধূর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে তার চিকিৎসা চলমান রাখতে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এখনো অভিযুক্তদের শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি পুলিশ। পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান জানিয়েছেন, অপরাধীদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, ভুক্তভোগীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভয়াবহতার প্রতিফলন
এই নৃশংস ঘটনায় খুলনা অঞ্চলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
(সূত্র- দৈনিক বাংলা)